দ্য বিডি এক্সপ্রেসঃ সহ্যের সীমা শেষ। আর নয় অপেক্ষা। এবার থেকে সর্বোচ্চ হার্ডলাইনে যাওয়ার পথে যৌথ বাহিনী এবং সে কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে শুরু হচ্ছেসোমবার থেকে। ইতোমধ্যেই বিজিবি, র্যাব, পুলিশ সমন্বয়ে জামায়াত-জঙ্গী অধ্যুষিত জেলাগুলোতে প্রাথমিক অভিযান শুরু করেছে।
এরই মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আটকও হয়েছে শ’ শ’। পনেরো জেলায় ইতোমধ্যে বিজিবি মোতায়েনের পর চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাশীঘ্র বিজিবি মোতায়েনের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আবেদন জানানো হয়েছে।
সর্বশেষ শনিবার প্রধানমন্ত্রীও ঘোষণা দিয়েছেন, দেশের মাটিতে কোন ধরনের সন্ত্রাস বরদাস্ত করা হবে না। এ ব্যাপারে তিনি গোয়েন্দা সংস্থাসমূহকেও সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রদান করেছেন গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে। বলেছেন, এ দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দেয়া হবে। অপরদিকে সরকারী সূত্রে জানা গেছে, শর্তসাপেক্ষে ২০ দলকে সভা সমাবেশের অনুমতি দিতে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল ইতোপূর্বেকার চেয়ে নমনীয় অবস্থানে রয়েছে।
তবে তার আগে অবরোধ, হরতাল ও সব ধরনের সহিংসতা বন্ধের ঘোষণা দিতে হবে। আবার এ মুহূর্তে কোন সংলাপ ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোন চিন্তা-ভাবনা সরকারের নেই। সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে, ২০ দলীয় জোট তাদের আহূত লাগাতার অবরোধ এবং বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে দিনব্যাপী, ৪৮ ঘণ্টার হরতালও অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে পুরো দেশ সহিংসতায় জিম্মি হয়ে পড়েছে।
মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে রয়েছে। ব্যবসাবাণিজ্যে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সাধারণ মানুষকে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় ফেলে দিয়েছে। যাত্রাপথে কখন কি ঘটে যায় এ নিয়ে যানবাহন মালিক ও যাত্রী মহলেও অজানা শঙ্কা ভর করে আছে। অপরদিকে, বিএনপি কার্যকর সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে এবং বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
এ অবস্থায় সরকার নীতি নির্ধারক মহল আর অপেক্ষা না করে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা তথা যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে হার্ডলাইনে গিয়ে সর্বোচ্চ কার্যক্রম চালাতে শুরু করতে তৎপর হয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে গ্রীন সিগন্যালও দেয়া হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানানো হয়, আজ রবিবার পর্যন্ত বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্যায়ের আখেরি মোনাজাতের অপেক্ষায় থেকে সকল পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে সরকার সহ্য করে গেছে বিভিন্নভাবে। হার্ডলাইনে যাওয়ার পরামর্শ ও চিন্তা-ভাবনা থাকলেও সে পথে যায়নি। কিন্তু এখন আর নয়। এবার থেকে সর্বাত্মক অভিযান শুরু হবে।
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ধরনের অভিযানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে কোন মুহূর্তে দেশজুড়ে শুরু হবে বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত বলে তিনি জানান। তাঁর মতে, কারও ঘরে যখন ডাকাত পড়ে তখন ডাকাত দৌড়ানোই গৃহকর্তার প্রধান কাজ এবং এ কাজে প্রতিবেশীদের সহযোগিতা থাকে। ডাকাতদের সঙ্গে গৃহকর্তা আলাপে বসে না। অনুরূপভাবে দেশে এখন অবরোধ আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে তা ডাকাত দলের ডাকাতির ঘটনার চেয়েও মারাত্মক। আর এ ডাকাতদের দমনে সরকার নিয়োজিত থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান ডাকাত দল পিছু হটছে না। উল্টো সংলাপের আকুতি জানাচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, ডাকাত বা সহিংসতায় লিপ্ত দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে সংলাপের কোন প্রশ্নই ওঠে না। অস্ত্র হাতে, লাঠি হাতে, আগুন জ্বালিয়ে, বোমা মেরে মানুষ হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত থেকে খেমটা নৃত্য প্রদর্শন করে চলেছে আগে তাদের চিরতরে দমন করাই এখন মূল কাজ। নচেত দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে না। সে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেই সরকারকে হার্ডলাইনে যেতে হয়েছে। প্রয়োজনে কঠোর থেকে কঠোরতর পন্থা অবলম্বনে সরকার দ্বিধা করবে না।