স্টাফ রিপোর্টার : আজ ১২ রবিউল আউয়াল (চন্দ্রমাস) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) বছর ঘুরে আজ আমাদের কাছে ফিরে এসেছে শ্রেষ্ঠ এ মহান দিনটি। শুকরিয়া মহিমাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে যিনি আমাদেরকে অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা নেয়ামতে আকবর রূপে উনার পেয়ারা হাবীব রাসূল (সা.)-কে এদিনে দুনিয়ায় প্রেরণ করে ধন্য করেছেন সমগ্র সৃষ্টিকে। তাই অসংখ্য দরূদ ও সালাম পেয়ারা নবী (সা.)-এর শানে। স্বাগতম মাহে রবিউল আউয়াল। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর দিন সরকারি ছুটির দিন। এ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট, প্রধান মন্ত্রী ও বিএনপি নেত্রীসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। এই দিনে মহান রাব্বুল আলামীন সমগ্র বিশ্বকে বিশেষ করে মুসলিম মিল্লাতকে আল্লাহ পাকের নেয়ামতের শোকর আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল-কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে প্রিয় হাবীব (সা.)! ‘বলে দিন, এসব কিছু আল্লাহর ফজল এবং তার রহমতের পরিচায়ক (যা হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে প্রেরণের মাধ্যমে তোমাদের উপর করা হয়েছে) সুতরাং মানুষের বিশেষ করে ঈমানদারদের উচিত এর উপর আনন্দ প্রকাশ করা। ইহা সে সকল হতে কত উত্তম, যা তারা সঞ্চয় করে বলেছে।’ (সূরা ইউনূস : আয়াত ৫৮) এই আয়াতে কারীমার আলোকে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, আল্লাহ তায়ালার ফজল এবং তার রহমতসমূহের শোকর আদায় করার একটি মকবুল তরীকা হচ্ছে খুশি ও আনন্দকে খোলাখুলি প্রকাশ করা। মিলাদে মোস্তফা (সা.) হতে বড় নেয়ামত, ফজল ও রহমত আর কি হতে পারে? এটা সেই বড় নেয়ামত যার জন্য আনন্দ প্রকাশ করার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত প্রদান করেছেন। এই আয়াতে কারীমার মধ্যে আল্লাহ পাকের সম্বোধনের লক্ষ্য হলো : নূরনবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা আহমাদ মুজতাবা (সা.)। তিনি যেন স্বীয় সাহাবায়ে কেরাম এবং তাদের সাহায্যে সকল উম্মতকে বলে দেন যে, তাদের উপর আল্লাহ পাকের যে রহমত বেলাদতে মোস্তফা (সা.)-এর মাধ্যমে নাজিল হয়েছে। তার শোকর গুজারীস্বরূপ তারা যেন যতখানি সম্ভব খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করে এবং যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে যেন তার স্মরণকে উচ্চকিত করে। তবে একথা সবারই জানা আছে যে, নেয়ামতের শোকর গুজারী দু’ভাবে হতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে এবং সমষ্টিগতভাবে। যে যেভাবেই খুশি প্রকাশ করুক না কেন, তা অবশ্যই আল্লাহ পাকের কাছে মকবুল ও মঞ্জুরি লাভ করবে এতে কোনোই সন্দেহ নেই। উপরোক্ত আয়াতে কারীমায় ‘বলে দিন’ শব্দটি হচ্ছে নির্দেশ সূচক। এই নির্দেশের আমূল বা নীতি হচ্ছে এই যে, পবিত্র কুরআনুল কারীমের সেখানেই ‘কুল’ অর্থাৎ বলে দিন শব্দ দ্বারা কোনো বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে, এটা দ্বীনের বা ধর্মের বুনিয়াদী ও গুরুত্বপূর্ণ হকীকতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যেমন আল্লাহ পাক যখন স্বীয় প্রভুত্ব এবং একত্বের ঘোষণা এবং তাওহীদের সঠিক নির্দেশনা প্রকাশ করতে ইচ্ছা করলেন, তখন ইরশাদ করলেন : হে প্রিয় হাবীব (সা.)! ‘আপনি বলে দিন তিনিই আল্লাহ যিনি একক ও অদ্বিতীয়।’ (সূরা ইখলাস : আয়াত ১)। উক্ত আয়াতে কারীমার দ্বারা এই হাকীকতও প্রকাশ পেয়েছে যে, নেয়ামত প্রদানকারী হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত। যিনি তার পেয়ারা হাবীব (সা.)-এর এই ধুলার ধরণীতে আগমন করাকে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কারণ, তিনি হচ্ছেন এই বিশ্বের সকল নেয়ামতের মূল। এই নেয়ামতের স্মরণ ও জিকিরক স্বয়ং আল্লাহ পাকই উচ্চকিত করেছেন। এজন্য কুল মাখলুকাতের বিশেষ করে উম্মতে মোহাম্মাদীয়ার উচিত ১২ রবিউল আউয়ালে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করা। অধিক হারে দরূদ ও সালাম পেশ করা এবং দান-খয়রাতের মাধ্যমে এই দিনটির মর্যাদাকে সামর্থ্য অনুসারে বর্ধিত করা। এতে করেই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি মহব্বতের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং মুমিনদের জোশ ও অনুরাগ বহুগুণে সম্প্রসারিত হয়। আল্লাহ পাক আমাদেরকে শোকর গুজার বান্দাহ হিসেবে কবুল ও মঞ্জুর করুন, আমীন! প্রেসিডেন্টের বাণী প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর শিক্ষা সমগ্র মানবজাতির জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে এক বাণীতে প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেন। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে তিনি দেশবাসী ও বিশ্বের মুসলিম ভাই-বোনদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ সমগ্র বিশ্বজগতের রহমত ও শান্তির দূত হিসেবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ জগতে প্রেরণ করেন। তিনি ছিলেন তাওহীদের প্রচারক, রিসালাতের ধারক ও বাহক এবং সর্বশেষ সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। প্রধানমন্ত্রীর বাণী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দৃঢ়বিশ্বাস, মহানবী (সা.) এর সুমহান আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে প্রতিটি জনগোষ্ঠীর অফুরন্ত কল্যাণ ও সফলতা। তিনি বলেন, আজকের অশান্ত ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতমুখর বিশ্বে প্রিয়নবী (সা.) এর অনুপম শিক্ষা অনুসরণের মাধ্যমেই বিশ্বের শান্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে শনিবার এক বাণীতে এসব কথা বলেন। তিনি বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আগমন ও ওফাতের পবিত্র স্মৃতিবিজড়িত ১২ রবিউল আউয়াল উপলক্ষে মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সদস্য ও দেশবাসীকে জানান আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। মহান আল্লাহ আমাদের প্রিয়নবী (সা.)-কে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ তথা সারা জাহানের জন্য রহমত হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পাপাচার, অত্যাচার, মিথ্যা, কুসংস্কার ও সংঘাতজর্জরিত পৃথিবীতে তিনি মানবতার মুক্তিদাতা ও ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। বেগম জিয়ার বাণী পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা এক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, মহান আল্লাহ বিশ্বজগতের রহমত স্বরূপ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে এই জগতে প্রেরণ করেন। বিশ্বনবীর আবির্ভাবে পৃথিবীতে মানুষ ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জগতের মুক্তির সন্ধান পায় এবং নিজেদের কল্যাণ ও শান্তির নিশ্চয়তা লাভ করে। সমাজে বিদ্যমান শত অনাচার ও কদর্যতার গ্লানি উপেক্ষা করে মহানবী মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের কাছে প্রার্থনা করি, মহানবী (সা.) এর শিক্ষা, আদর্শ ও ত্যাগের মহিমা আমরা সবাই যেন নিজেদের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে পারি।