দি বিডি এস্কপ্রেসঃ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মিল রেখে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বেতনও গড়ে ১০০ শতাংশ বাড়িয়ে নতুন বেতন কাঠামো সুপারিশ করেছে ‘সশস্ত্র বাহিনী বেতন কমিটি’।
এতে সর্বোচ্চ পদে থাকা একজন চার তারকা জেনারেল মূল বেতন হিসাবে মাসে এক লাখ এবং সর্বনিম্ন গ্রেডে বেসামরিক দায়িত্বে থাকা একজন অফিস সহকারী ৮ হাজার ২০০ টাকা পাবেন ।
এর সঙ্গে যুক্ত হবে বাড়িভাড়াসহ সশস্ত্রবাহিনীর জন্য প্রযোজ্য অন্যান্য ভাতা ও সুবিধা।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ‘সশস্ত্র বাহিনী বেতন কমিটি’ বৃহস্পতিবার সকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাতে এই সুপারিশ জমা দেয়। আট সদস্যের কমিটির অন্য সদস্যরাও এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “এটা তো আমি এখনো দেখি নাই। সুতরাং এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে এর সমন্বয় দেখতে চাই। আর প্রতিটি সুপারিশেই কিছু কিছু নতুন কথা ও উদ্ভাবনী বিষয় থাকে। আমরা এটা দেখে সিদ্ধান্ত নেব।”
আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য যে বেতন কাঠামো জমা দিয়েছেন তার সঙ্গে সমন্বয় রেখেই সশস্ত্র বাহিনীর বেতন কাঠামো প্রস্তাব করেছেন তারা।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রস্তাবিত কাঠামোর মতোই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য ১৬টি গ্রেডে বেতন প্রস্তাব করেছে কমিটি। এতে জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশের মতোই সর্বোচ্চ ৮০ হাজার ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২০০ টাকা মূল বেতনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সরকারি চাকরিজীবীদের মতো সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও এখন সর্বনিম্ন ৪,১০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা ‘বেসিক’ ধরে বেতন পাচ্ছেন। তবে তাদের ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তুলনায় বেশি।
নতুন কাঠামোতে সর্বনিম্ন গ্রেডের বেসামরিক কর্মচারীদের (এনসি) বেতন ৮ হাজার ২০০ টাকা ধরা হলেও একজন সৈনিকের মূল বেতন হবে ৯ হাজার টাকা।
আর নতুন কমিশন পাওয়া একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্টের মূল বেতন হবে মাসে ২৫ হাজার টাকা, যা এতোদিন ১১ হাজার টাকা ছিল।
বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে যোগ দেওয়া সরকারি চাকরিজীবীদের জন্যও একই বেতনের প্রস্তাব করেছে জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন।
সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ গ্রেডে সচিব পদমর্যাদায় মেজর জেনারেল ও সমান র্যাংকের কর্মকর্তাদের মাসিক মূল বেতন ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৮০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে এই কাঠামোতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও সমান র্যাংকের কর্মকর্তারা জ্যেষ্ঠ সচিব মর্যাদায় ৮৮ হাজার টাকা এবং জেনারেল ও সমান র্যাংকের কর্মকর্তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের মর্যাদায় ১ লাখ টাকা পাবেন।
আনোয়ার হোসেন বলেন, “বাহিনী প্রধানরা তাদের র্যাংক অনুযায়ী বেতন পাবেন। বাহিনী প্রধান যদি চার তারকা জেনারেল হন তবে তার মূল বেতন হবে এক লাখ টাকা। এর সঙ্গে বাহিনী প্রধান হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্বের জন্য ভাতা যুক্ত হবে।”
তিনি জানান, এই কাঠামোর তৈরির আগে সশস্ত্র বাহিনীর সকল স্তরের সদস্যদের মতামত নিয়েছে কমিশন। এ ছাড়া জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের সঙ্গেও একাধিকবার বৈঠক করেছে।
“সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বেতন যৌক্তিকভাবে বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখযোগ্য সুপারিশ করা হয়েছে।”
আনোয়ার হোসেন বলেন, হিসাবের সুবিধার জন্যই জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার ও নন-কমিশন্ড অফিসারদের বেতন হিসাব করা হয়েছে ‘ভার্টিকেল স্কেলে’। মেজর জেনারেল থেকে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পর্যন্ত সব পদের বেতন জাতীয় বেতন স্কেলের প্রস্তাবিত গ্রেডের ধারাবাহিকতায় সমন্বয় করা হয়েছে।
“এ ছাড়া ‘আর্মড ফোর্সেস নার্সিং সার্ভিসেস ১৯৫২’ আইন অনুযায়ী এফএনএস কর্মকর্তাদের বেতন অন্যান্য কর্মকর্তাদের মতো একই গ্রেডে নির্ধারণ এবং সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ প্রশিক্ষিত কোর্স যেমন সেনাবাহিনী কমান্ডো, প্যারা কমান্ডো, প্যারা ট্রুপস ও স্নাইপারদের জন্য বিশেষ ভাতার সুপারিশ করা হয়েছে।”
সেনা সদস্যরা যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কাজ করতে আগ্রহী হন, সেজন্য সারাদেশে একই হারে বাড়ি ভাড়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রতিবন্ধী সন্তানদের জন্য বিশেষ আনুতোষিকেরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি ‘সশস্ত্র বাহিনী বেতন কমিটি-২০১৩’ গঠন করা হয়। আট সদস্যের এ কমিটিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম-সচিবসহ তিন বাহিনীর সাতজন প্রতিনিধি কাজ করেন।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন গত ২১ ডিসেম্বর একই রকম কাঠামোতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করে।
তাদের প্রস্তাবে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ গ্রেডে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। আগামী ১ জুলাই থেকে প্রায় ১৩ লাখ সরকারি চাকরিজীবী নতুন কাঠামোয় বেতন পাবেন।