বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতার এক নতুন কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। এই অঞ্চলকে অস্থির করার খেলা শুরু হয় বেশ ক’বছর আগে থেকেই। ২০০৭ সালে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত করে সামরিক সমর্থনপুষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই সরকারের নানা ধরনের বিতর্কিত পদক্ষেপ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও ধারাবাহিক স্থিতিকে হুমকির মধ্যে ঠেলে দেয়। এ সময় দুর্নীতিবাজ ধরার নামে দেশের শীর্ষস্থানীয় উদ্যোক্তাদের এমনভাবে হয়রানি করা হয় যে, এর পরের বিনিয়োগ স্থবিরতা আর ফিরিয়ে আনা যায়নি। অনেক শিল্পোদ্যোক্তা শিল্প স্থাপনের জন্য চীন, ভিয়েতনামসহ অন্য স্থিতিশীল দেশ বেছে নেয়। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিদায় গ্রহণ করার নির্বাচনের যেসব রহস্য এখন বের হচ্ছে তাতে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে।
তত্ত্বাবধায়ক-উত্তর আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ নিয়ে বাংলাদেশের শাসনক্ষমতা পরিচালনা করছে।বাংলাদেশে প্রভাবশালী আঞ্চলিক শক্তি ও বিশ্বশক্তিগুলো এ দেশে সামাজিকভাবে শক্ত বিভাজন প্রত্যাশা করেছে নিজ নিজ স্বার্থ আদায়ের লক্ষ্যে। যে বিভাজন রাষ্ট্রের মধ্যে এক দিকে পরস্পর বৈরিতাকে দীর্ঘস্থায়ী করবে, অন্য দিকে শাসনব্যবস্থার ধারাবাহিকতাকে ক্ষুণ করবে। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন এর পেছনে একটি প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এবং তার পেছনে মধ্যপ্রাচ্যের একটি শক্তিমান ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার পরিকল্পনা সক্রিয় ছিল
সাধারণভাবে রক্ষক্ষয়ী বিপ্লব বা মুক্তিযুদ্ধের পর যে ধরনের বৈপ্লবিক বা প্রতিশোধপরায়ণতা বিশ্বের কোনো কোনো দেশে দেখা গেছে তার পুনরাবৃত্তি লক্ষ করা যায় গত ছয় বছর সময়ে। এ সময়ে যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিকল্পনা বা কর্মসূচি প্রকৃতপক্ষে কতটা সক্রিয় আর কতটা এ ধরনের এক শাসন কায়েমের এজেন্ডা পালনে তাদের বাধ্য করা হচ্ছে তা এক সময় হয়তো প্রকাশ হবে। কিন্তু ভেতরের খবরাখবর যারা বিশ্লেষণ করেন তাদের অনেকের বক্তব্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সরকারের সব কার্যক্রম নিজের ইচ্ছায় করতে পারছেন না। কিছু এজেন্ডা বাস্তবায়নের শর্ত মেনে তাকে ক্ষমতায় আসতে হয়েছিল। তাকে ক্ষমতায় থাকার জন্য সেসব এজেন্ডা কার্যকর করতে হচ্ছে। আর এর বাইরে যাওয়া তার জন্য সম্ভব হবে না। যখন যাবেন তখন তিনি আর ক্ষমতায় থাকবেন না।
বাংলাদেশের ঘটনা পরম্পরাকে যারা গভীর থেকে বিশ্লেষণ করেন তাদের সামনে বিশেষ কিছু বিষয় স্পষ্টভাবে সামনে চলে আসে। বাংলাদেশে প্রভাবশালী আঞ্চলিক শক্তি ও বিশ্বশক্তিগুলো এ দেশে সামাজিকভাবে শক্ত বিভাজন প্রত্যাশা করেছে নিজ নিজ স্বার্থ আদায়ের লক্ষ্যে। যে বিভাজন রাষ্ট্রের মধ্যে এক দিকে পরস্পর বৈরিতাকে দীর্ঘস্থায়ী করবে, অন্য দিকে শাসনব্যবস্থার ধারাবাহিকতাকে ক্ষুণ করবে। কার্যত এ সময়ে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বিভাজন রাষ্ট্রকে স্পষ্ট দু’টি শিবিরে বিভক্ত করার মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে দেশের রাজনৈতিক শক্তি কোনো বড় রকমের জাতীয় ইস্যুতেও আর এক হতে না পারে।
অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন এর পেছনে একটি প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এবং তার পেছনে মধ্যপ্রাচ্যের একটি শক্তিমান ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার পরিকল্পনা সক্রিয় ছিল। অবশ্য দুই রাষ্ট্রের কাজ অভিন্ন হলেও তাদের লক্ষ্য ছিল ভিন্ন। প্রতিবেশী দেশটি মনে করেছে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী ইসলামিস্ট ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ক্রাস করা গেলে এ দেশের রাজনীতি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দীর্ঘস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। অন্য দিকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশটির লক্ষ্য ছিল অনেক গভীর। তাদের লক্ষ্য হলো এ অঞ্চলে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করা। এ জন্য এ অঞ্চলের তিন দেশ ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতি তাদের দৃষ্টি অনেক দিনের।
শত শত বছর ধরে এখানকার উপজাতীয় অঞ্চলগুলোতে ধর্মান্তরের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসা হয়েছে। খ্রিষ্টান মিশনারি তৎপরতায় ভারতের সাত রাজ্যের বেশির ভাগ রাজ্যে অহিন্দুরা সম্মিলিতভাবে এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ। কয়েকটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেছে খ্রিষ্টানরা। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং মিয়ানমারের শিন রাজ্যেও একই ধরনের মিশনারি তপরতা পরিচালিত হয়।
এর মধ্যে ভারতের মিজোরোম ও মনিপুরে কয়েকটি উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে আবিষ্কার করা হয় ইহুদিদের হারানো ১০ গোত্রের মধ্যে একটি গোত্র। যাদেরকে বলা হচ্ছে যুশেফের (হজরত ইউসুফ আ:) সন্তান মেনাসের বংশধর। তাদের আচার ও জীবনাচরণ ও ধর্মচর্চায় প্রভাব আবিষ্কার করা হয় জুদাইজমের। হারানো ১০ ইহুদি গোত্রের অন্য কয়েকটি ভারতের অন্য অঞ্চলে বসতি করে বলে উল্লেখ করা হয়।
গত দশকে ইসরাইলের শীর্ষ ইহুদি রাব্বি (যাজক) শ্লোমো আমরের রুলিংয়ের ওপর ভিত্তি করে মনিপুর-মিজোরামের ৯ হাজার লোককে ইহুদি হিসেবে ইসরাইলে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। রাব্বি শ্লোমো তাদের হারিয়ে যাওয়া ইহুদি গোত্রের বংশধর হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও শত শত বছর ধরে ইহুদি ধর্মাচার থেকে দূরে থাকার কারণে তাদের ইহুদি ধর্মমতে ফেরানোর জন্য আলিয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে বলেন। এভাবে নানা টানাপড়েনের মধ্যেও মনিপুর-মিজোরাম থেকে কথিত ইহুদিরা ইসরাইলে পুনর্বাসন গ্রহণ করেন এবং তাদের বিতর্কিত ফিলিস্তিন অঞ্চলগুলোতে বসতির ব্যবস্থা করা হয়।
এর মধ্যে ইহুদি রাব্বিরা ইসরাইলে ইহুদি ধর্মমতে ফেরানোর অনুষ্ঠানের পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের এই অঞ্চলে এসেও মনিপুর-মিজোরোমের কুকি মিজু ও শিনদের ইহুদি ধর্মমতে ফেরানোর কাজ করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে এখন ইহুদি ধর্মমতে ফেরানোর এই কার্যাদি নেপালে নিয়ে গিয়ে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের কথিত হারানো গোত্রের ইহুদিদের ইসরাইলে নিয়ে যাওয়াতে বড় রকমের বিপত্তি না ঘটলেও ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টানদের ইহুদি ধর্মমতে ফিরিয়ে আনা আর তাদের রাজনৈতিক অধিকারের দাবি ওঠানোর পর ভারত ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মিজোরামে ইহুদি সংখ্যা অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ায় এর মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদের আশঙ্কা চেপে বসে।
মিজোরামের রাজধানী আইজল খ্রিষ্টান গবেষণা কেন্দ্রের ড. বিয়াকশিয়ামা বলেন,‘বিদেশী রাব্বি এসে ব্যাপকভাবে ইহুদি ধর্মান্তরে এই এলাকায় শুধু সামাজিক অস্থিরতাই সৃষ্টি হচ্ছে না একই সাথে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক মানুষ অন্য দেশের নাগরিকত্ব লাভের উপযুক্ত হচ্ছে যাতে ভারতের প্রতি তাদের আনুগত্য হয়ে পড়ছে প্রশ্নসাপেক্ষ।’
এটি আরো বেশি আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয় যখন ড. বিয়াকশিয়ামা ২০০৪ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন শিঙল্যাং ইসরাইল পিপলস কনভেনশনের (সিআইপিসি) প্রতিষ্ঠাতা লালশানিমা সাইলোর একটি বক্তব্য তুলে ধরেন। এই বক্তব্যে সাইলো বলেন, ‘সিআইপিসির লক্ষ এখানকার ইহুদিদের ইসরাইলে পুনর্বাসনের জন্য পাঠানো নয়, তবে জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে এই এলাকাকে মিজো উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার ব্যবস্থা আমরা করতে চাই, যা এখানে মিজো ইসরাইলিদের একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনে সাহায্য করবে।’ এর পর থেকে মিজোরাম বা মনিপুর থেকে ইসরাইলে পুনর্বাসন অনেকটাই কমে যায় কিন্তু ইহুদি ধর্মমতে পাহাড়িদের প্রত্যাবাসন চলছে অব্যাহতভাবে।
১৮৯৪ সালে খ্রিষ্টান মিশনারির কাজ শুরু করার পর বিশ শতকের মাঝামাঝি এসে মিজোরামে বেশির ভাগ পাহাড়ি খ্রিষ্টান হয়ে যায়। একই সময়ে মনিপুরে খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠী পৌঁছে যায় ৩০ শতাংশে। ১৯৫১ সালে একজন পাহাড়ি নেতা ইসরাইলে গিয়ে জুদাইজমে দীক্ষা নিয়ে তা অনুসরণ করেন এবং সেখান থেকে দেশে ফিরে এসে মিজোদের ইহুদি সম্পৃক্ততার বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালান। এর পর থেকে মিজোরাম মনিপুরে কথিত ইহুদি ধর্মমতে প্রত্যাবাসন বাড়তে থাকে। এতে বর্তমানে মিজোরামে ইহুদি সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশ আর খ্রিষ্টান সংখ্যা অনেক কমে ৪০ ভাগে নেমে এসেছে। এর আগে খ্রিষ্ট ধর্মমত গ্রহণকারী মিজো কুকি শিনরা প্রধানত ইহুদি ধর্মমতে চলে আসায় ইহুদিসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কমছে খ্রিষ্টানসংখ্যা।এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে অচিরেই রাজ্যটিতে ইহুদিসংখ্যা খ্রিষ্টানদের ছাড়িয়ে যাবে। হিন্দু ধর্মমতের মতো ইহুদি ধর্মমত গ্রহণ করা যায় না বলে মিজো-কুকিদের পুরনো ইহুদি বলে স্বীকৃতি দিয়ে জুদাইজমে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
মিজোরামে ‘শিঙল্যাং ইসরাইল’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গোপন সমঝোতার কথা জানা যায়। এই সমঝোতা অনুসারে মিজোরামে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সহযোগিতার বিনিময়ে ইহুদিরা পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করবে।
শিন-কুকি-মিজো উপজাতীয় যাদেরকে ইহুদিদের হারানো গোত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে তাদের বসবাস মিজোরাম মনিপুরের বাইরে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং মিয়ানমারের শিন রাজ্যেও রয়েছে। এ ব্যাপারে ইহুদিদের বিভিন্ন গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে শিন-কুকি-মিজো এবং অন্য পাহাড়িদের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ লাখ জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা এক সময়ের হারানো ইহুদি গোত্রের বংশধর। এই সংখ্যক জনগোষ্ঠী একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য পর্যাপ্ত মনে করা হয়। এ লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করা গেলে ইসরাইলে যে এক লাখের কাছাকাছি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইহুদি রয়েছে তাদের প্রয়োজনে ফিরিয়ে আনা হতে পারে।
প্রশ্ন উঠতে পারে মিজোরাম বা মনিপুরে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সাথে বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের শিন-রাখাইন রাজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টির কি সম্পর্ক থাকতে পারে? বিশ্ব রাজনীতির নিয়ম অনুসারে কোনো অঞ্চলে নতুন কোনো বিন্যাস ঘটাতে হলে সেখানে নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে হয়। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার সাথে এর যোগসূত্র রয়েছে। এ অঞ্চলে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে এর সামনে সম্ভাব্য প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ইসলামিস্টরা। এই কাজ বিএনপিকে দিয়ে করানো সম্ভব হবে না বিধায় ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে বিএনপির কোমর ভাঙা হয়। এরপর এমন এক সাজানো নির্বাচন করা হয় যাতে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে মহাজোটের সরকার। সে সরকারকে দিয়ে যুদ্ধাপরাধ বিচার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা, নির্যাতন ও দমনের মাধ্যমে দেশে চরম সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়।
এই কার্যক্রম শেষ মনে করা হলে আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকার আর ক্ষমতায় নাও থাকতে পারে। নেপথ্যে থেকে যে শক্তি একটি আল্ট্রা সেকুলার ফোর্সকে দিয়ে ইসলামিস্টদের দমনের চেষ্টা করেছে সেই শক্তি এক সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে ভারতবান্ধব সরকারকে ক্ষমতায় আর নাও চাইতে পারে। সেটি হতে পারে বর্তমান সরকারের অকাল পতনের একটি কারণও। কিভাবে কখন সেটি ঘটতে পারে তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও নানা ঘটনার অন্তর্নিহিত বার্তা থেকে এটি খুব বেশি দূরে নয় বলেই মনে হয়। জঙ্গি জিগির তুলে এখানে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দেয়ার পেছনে এই শক্তির পরিকল্পিত পরামর্শও থাকতে পারে। আর এসব কারণে বাংলাদেশে আগামী দিনগুলোতে স্থিতিশীলতা কতটা শেষ পর্যন্ত ফিরে আসে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বাংলাদেশে গত ৭-৮ বছর আন্তর্র্জাতিক ও আঞ্চলিক দুই প্রভাবশালী শক্তি এক হয়ে কাজ করেছে। সাম্প্রতিক প্রবণতাগুলো দেখে মনে হয় এখন এই দুই শক্তির পথযাত্রা ও কৌশল বেশ খানিকটা ভিন্নমুখী হতে শুরু করেছে। এর প্রভাব আগামী বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে পড়বে অনিবার্যভাবেইবাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতার এক নতুন কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। এই অঞ্চলকে অস্থির করার খেলা শুরু হয় বেশ ক’বছর আগে থেকেই। ২০০৭ সালে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত করে সামরিক সমর্থনপুষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই সরকারের নানা ধরনের বিতর্কিত পদক্ষেপ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও ধারাবাহিক স্থিতিকে হুমকির মধ্যে ঠেলে দেয়। এ সময় দুর্নীতিবাজ ধরার নামে দেশের শীর্ষস্থানীয় উদ্যোক্তাদের এমনভাবে হয়রানি করা হয় যে, এর পরের বিনিয়োগ স্থবিরতা আর ফিরিয়ে আনা যায়নি। অনেক শিল্পোদ্যোক্তা শিল্প স্থাপনের জন্য চীন, ভিয়েতনামসহ অন্য স্থিতিশীল দেশ বেছে নেয়। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিদায় গ্রহণ করার নির্বাচনের যেসব রহস্য এখন বের হচ্ছে তাতে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে।
তত্ত্বাবধায়ক-উত্তর আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ নিয়ে বাংলাদেশের শাসনক্ষমতা পরিচালনা করছে।বাংলাদেশে প্রভাবশালী আঞ্চলিক শক্তি ও বিশ্বশক্তিগুলো এ দেশে সামাজিকভাবে শক্ত বিভাজন প্রত্যাশা করেছে নিজ নিজ স্বার্থ আদায়ের লক্ষ্যে। যে বিভাজন রাষ্ট্রের মধ্যে এক দিকে পরস্পর বৈরিতাকে দীর্ঘস্থায়ী করবে, অন্য দিকে শাসনব্যবস্থার ধারাবাহিকতাকে ক্ষুণ করবে। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন এর পেছনে একটি প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এবং তার পেছনে মধ্যপ্রাচ্যের একটি শক্তিমান ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার পরিকল্পনা সক্রিয় ছিল
সাধারণভাবে রক্ষক্ষয়ী বিপ্লব বা মুক্তিযুদ্ধের পর যে ধরনের বৈপ্লবিক বা প্রতিশোধপরায়ণতা বিশ্বের কোনো কোনো দেশে দেখা গেছে তার পুনরাবৃত্তি লক্ষ করা যায় গত ছয় বছর সময়ে। এ সময়ে যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিকল্পনা বা কর্মসূচি প্রকৃতপক্ষে কতটা সক্রিয় আর কতটা এ ধরনের এক শাসন কায়েমের এজেন্ডা পালনে তাদের বাধ্য করা হচ্ছে তা এক সময় হয়তো প্রকাশ হবে। কিন্তু ভেতরের খবরাখবর যারা বিশ্লেষণ করেন তাদের অনেকের বক্তব্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সরকারের সব কার্যক্রম নিজের ইচ্ছায় করতে পারছেন না। কিছু এজেন্ডা বাস্তবায়নের শর্ত মেনে তাকে ক্ষমতায় আসতে হয়েছিল। তাকে ক্ষমতায় থাকার জন্য সেসব এজেন্ডা কার্যকর করতে হচ্ছে। আর এর বাইরে যাওয়া তার জন্য সম্ভব হবে না। যখন যাবেন তখন তিনি আর ক্ষমতায় থাকবেন না।
বাংলাদেশের ঘটনা পরম্পরাকে যারা গভীর থেকে বিশ্লেষণ করেন তাদের সামনে বিশেষ কিছু বিষয় স্পষ্টভাবে সামনে চলে আসে। বাংলাদেশে প্রভাবশালী আঞ্চলিক শক্তি ও বিশ্বশক্তিগুলো এ দেশে সামাজিকভাবে শক্ত বিভাজন প্রত্যাশা করেছে নিজ নিজ স্বার্থ আদায়ের লক্ষ্যে। যে বিভাজন রাষ্ট্রের মধ্যে এক দিকে পরস্পর বৈরিতাকে দীর্ঘস্থায়ী করবে, অন্য দিকে শাসনব্যবস্থার ধারাবাহিকতাকে ক্ষুণ করবে। কার্যত এ সময়ে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বিভাজন রাষ্ট্রকে স্পষ্ট দু’টি শিবিরে বিভক্ত করার মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে দেশের রাজনৈতিক শক্তি কোনো বড় রকমের জাতীয় ইস্যুতেও আর এক হতে না পারে।
অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন এর পেছনে একটি প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এবং তার পেছনে মধ্যপ্রাচ্যের একটি শক্তিমান ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার পরিকল্পনা সক্রিয় ছিল। অবশ্য দুই রাষ্ট্রের কাজ অভিন্ন হলেও তাদের লক্ষ্য ছিল ভিন্ন। প্রতিবেশী দেশটি মনে করেছে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী ইসলামিস্ট ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ক্রাস করা গেলে এ দেশের রাজনীতি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দীর্ঘস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। অন্য দিকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশটির লক্ষ্য ছিল অনেক গভীর। তাদের লক্ষ্য হলো এ অঞ্চলে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করা। এ জন্য এ অঞ্চলের তিন দেশ ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতি তাদের দৃষ্টি অনেক দিনের।
শত শত বছর ধরে এখানকার উপজাতীয় অঞ্চলগুলোতে ধর্মান্তরের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসা হয়েছে। খ্রিষ্টান মিশনারি তৎপরতায় ভারতের সাত রাজ্যের বেশির ভাগ রাজ্যে অহিন্দুরা সম্মিলিতভাবে এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ। কয়েকটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেছে খ্রিষ্টানরা। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং মিয়ানমারের শিন রাজ্যেও একই ধরনের মিশনারি তপরতা পরিচালিত হয়।
এর মধ্যে ভারতের মিজোরোম ও মনিপুরে কয়েকটি উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে আবিষ্কার করা হয় ইহুদিদের হারানো ১০ গোত্রের মধ্যে একটি গোত্র। যাদেরকে বলা হচ্ছে যুশেফের (হজরত ইউসুফ আ:) সন্তান মেনাসের বংশধর। তাদের আচার ও জীবনাচরণ ও ধর্মচর্চায় প্রভাব আবিষ্কার করা হয় জুদাইজমের। হারানো ১০ ইহুদি গোত্রের অন্য কয়েকটি ভারতের অন্য অঞ্চলে বসতি করে বলে উল্লেখ করা হয়।
গত দশকে ইসরাইলের শীর্ষ ইহুদি রাব্বি (যাজক) শ্লোমো আমরের রুলিংয়ের ওপর ভিত্তি করে মনিপুর-মিজোরামের ৯ হাজার লোককে ইহুদি হিসেবে ইসরাইলে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। রাব্বি শ্লোমো তাদের হারিয়ে যাওয়া ইহুদি গোত্রের বংশধর হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও শত শত বছর ধরে ইহুদি ধর্মাচার থেকে দূরে থাকার কারণে তাদের ইহুদি ধর্মমতে ফেরানোর জন্য আলিয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে বলেন। এভাবে নানা টানাপড়েনের মধ্যেও মনিপুর-মিজোরাম থেকে কথিত ইহুদিরা ইসরাইলে পুনর্বাসন গ্রহণ করেন এবং তাদের বিতর্কিত ফিলিস্তিন অঞ্চলগুলোতে বসতির ব্যবস্থা করা হয়।
এর মধ্যে ইহুদি রাব্বিরা ইসরাইলে ইহুদি ধর্মমতে ফেরানোর অনুষ্ঠানের পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের এই অঞ্চলে এসেও মনিপুর-মিজোরোমের কুকি মিজু ও শিনদের ইহুদি ধর্মমতে ফেরানোর কাজ করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে এখন ইহুদি ধর্মমতে ফেরানোর এই কার্যাদি নেপালে নিয়ে গিয়ে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের কথিত হারানো গোত্রের ইহুদিদের ইসরাইলে নিয়ে যাওয়াতে বড় রকমের বিপত্তি না ঘটলেও ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টানদের ইহুদি ধর্মমতে ফিরিয়ে আনা আর তাদের রাজনৈতিক অধিকারের দাবি ওঠানোর পর ভারত ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মিজোরামে ইহুদি সংখ্যা অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ায় এর মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদের আশঙ্কা চেপে বসে।
মিজোরামের রাজধানী আইজল খ্রিষ্টান গবেষণা কেন্দ্রের ড. বিয়াকশিয়ামা বলেন,‘বিদেশী রাব্বি এসে ব্যাপকভাবে ইহুদি ধর্মান্তরে এই এলাকায় শুধু সামাজিক অস্থিরতাই সৃষ্টি হচ্ছে না একই সাথে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক মানুষ অন্য দেশের নাগরিকত্ব লাভের উপযুক্ত হচ্ছে যাতে ভারতের প্রতি তাদের আনুগত্য হয়ে পড়ছে প্রশ্নসাপেক্ষ।’
এটি আরো বেশি আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয় যখন ড. বিয়াকশিয়ামা ২০০৪ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন শিঙল্যাং ইসরাইল পিপলস কনভেনশনের (সিআইপিসি) প্রতিষ্ঠাতা লালশানিমা সাইলোর একটি বক্তব্য তুলে ধরেন। এই বক্তব্যে সাইলো বলেন, ‘সিআইপিসির লক্ষ এখানকার ইহুদিদের ইসরাইলে পুনর্বাসনের জন্য পাঠানো নয়, তবে জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে এই এলাকাকে মিজো উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার ব্যবস্থা আমরা করতে চাই, যা এখানে মিজো ইসরাইলিদের একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনে সাহায্য করবে।’ এর পর থেকে মিজোরাম বা মনিপুর থেকে ইসরাইলে পুনর্বাসন অনেকটাই কমে যায় কিন্তু ইহুদি ধর্মমতে পাহাড়িদের প্রত্যাবাসন চলছে অব্যাহতভাবে।
১৮৯৪ সালে খ্রিষ্টান মিশনারির কাজ শুরু করার পর বিশ শতকের মাঝামাঝি এসে মিজোরামে বেশির ভাগ পাহাড়ি খ্রিষ্টান হয়ে যায়। একই সময়ে মনিপুরে খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠী পৌঁছে যায় ৩০ শতাংশে। ১৯৫১ সালে একজন পাহাড়ি নেতা ইসরাইলে গিয়ে জুদাইজমে দীক্ষা নিয়ে তা অনুসরণ করেন এবং সেখান থেকে দেশে ফিরে এসে মিজোদের ইহুদি সম্পৃক্ততার বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালান। এর পর থেকে মিজোরাম মনিপুরে কথিত ইহুদি ধর্মমতে প্রত্যাবাসন বাড়তে থাকে। এতে বর্তমানে মিজোরামে ইহুদি সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশ আর খ্রিষ্টান সংখ্যা অনেক কমে ৪০ ভাগে নেমে এসেছে। এর আগে খ্রিষ্ট ধর্মমত গ্রহণকারী মিজো কুকি শিনরা প্রধানত ইহুদি ধর্মমতে চলে আসায় ইহুদিসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কমছে খ্রিষ্টানসংখ্যা।এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে অচিরেই রাজ্যটিতে ইহুদিসংখ্যা খ্রিষ্টানদের ছাড়িয়ে যাবে। হিন্দু ধর্মমতের মতো ইহুদি ধর্মমত গ্রহণ করা যায় না বলে মিজো-কুকিদের পুরনো ইহুদি বলে স্বীকৃতি দিয়ে জুদাইজমে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
মিজোরামে ‘শিঙল্যাং ইসরাইল’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গোপন সমঝোতার কথা জানা যায়। এই সমঝোতা অনুসারে মিজোরামে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সহযোগিতার বিনিময়ে ইহুদিরা পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করবে।
শিন-কুকি-মিজো উপজাতীয় যাদেরকে ইহুদিদের হারানো গোত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে তাদের বসবাস মিজোরাম মনিপুরের বাইরে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং মিয়ানমারের শিন রাজ্যেও রয়েছে। এ ব্যাপারে ইহুদিদের বিভিন্ন গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে শিন-কুকি-মিজো এবং অন্য পাহাড়িদের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ লাখ জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা এক সময়ের হারানো ইহুদি গোত্রের বংশধর। এই সংখ্যক জনগোষ্ঠী একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য পর্যাপ্ত মনে করা হয়। এ লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করা গেলে ইসরাইলে যে এক লাখের কাছাকাছি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইহুদি রয়েছে তাদের প্রয়োজনে ফিরিয়ে আনা হতে পারে।
প্রশ্ন উঠতে পারে মিজোরাম বা মনিপুরে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সাথে বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের শিন-রাখাইন রাজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টির কি সম্পর্ক থাকতে পারে? বিশ্ব রাজনীতির নিয়ম অনুসারে কোনো অঞ্চলে নতুন কোনো বিন্যাস ঘটাতে হলে সেখানে নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে হয়। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার সাথে এর যোগসূত্র রয়েছে। এ অঞ্চলে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে এর সামনে সম্ভাব্য প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ইসলামিস্টরা। এই কাজ বিএনপিকে দিয়ে করানো সম্ভব হবে না বিধায় ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে বিএনপির কোমর ভাঙা হয়। এরপর এমন এক সাজানো নির্বাচন করা হয় যাতে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে মহাজোটের সরকার। সে সরকারকে দিয়ে যুদ্ধাপরাধ বিচার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা, নির্যাতন ও দমনের মাধ্যমে দেশে চরম সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়।
এই কার্যক্রম শেষ মনে করা হলে আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকার আর ক্ষমতায় নাও থাকতে পারে। নেপথ্যে থেকে যে শক্তি একটি আল্ট্রা সেকুলার ফোর্সকে দিয়ে ইসলামিস্টদের দমনের চেষ্টা করেছে সেই শক্তি এক সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে ভারতবান্ধব সরকারকে ক্ষমতায় আর নাও চাইতে পারে। সেটি হতে পারে বর্তমান সরকারের অকাল পতনের একটি কারণও। কিভাবে কখন সেটি ঘটতে পারে তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও নানা ঘটনার অন্তর্নিহিত বার্তা থেকে এটি খুব বেশি দূরে নয় বলেই মনে হয়। জঙ্গি জিগির তুলে এখানে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দেয়ার পেছনে এই শক্তির পরিকল্পিত পরামর্শও থাকতে পারে। আর এসব কারণে বাংলাদেশে আগামী দিনগুলোতে স্থিতিশীলতা কতটা শেষ পর্যন্ত ফিরে আসে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বাংলাদেশে গত ৭-৮ বছর আন্তর্র্জাতিক ও আঞ্চলিক দুই প্রভাবশালী শক্তি এক হয়ে কাজ করেছে। সাম্প্রতিক প্রবণতাগুলো দেখে মনে হয় এখন এই দুই শক্তির পথযাত্রা ও কৌশল বেশ খানিকটা ভিন্নমুখী হতে শুরু করেছে। এর প্রভাব আগামী বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে পড়বে অনিবার্যভাবেই।