১২ নভেম্বর (রেডিও রাশিয়া ): উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বিদেশি আখ্যা দিয়ে ফের বিতর্কে জড়ালেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঝি। তাদের আর্যদের বংশধর বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। এর পরই বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েন মাঝি। এহেন মন্তব্য করে তিনি রাজ্যে বর্ণবিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে এক অনুষ্ঠানে মাঝি বলেন, ‘উচ্চবর্ণের মানুষরা আর্যদের বংশধর। ওরা আদতে বিদেশি। বাইরের দেশ থেকে এদেশে প্রবেশ করেছে ওরা। আদিবাসী ও দলিতরাই আসল ভারতীয়।’
এখানেই শেষ নয়। পিছিয়ে পড়া এই শ্রেণির মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে তাদের রাজনীতি সচেতন করে তোলার ডাক দেন মুখ্যমন্ত্রী। যাতে রাজ্যের রাজনৈতিক ভবিষ্যত গড়ে তুলতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারেন দলিত সমাজ।
তাঁর এই মন্তব্যের সমালোচনা করে সরব হন বিজেপি নেতা সুশীল কুমার মোদি। মাঝির এই বক্তব্য সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। মোদি বলেন, ‘এই প্রথম এই ধরণের মন্তব্য করছেন না মাঝি। এর আগে তিনি বলেছিলেন, মধুবনী জেলার একটি মন্দির দর্শন করে ফিরে আসার পরে ওই মন্দির শুদ্ধ করা হয়েছিল।’
গত ২৮ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে জিতনরাম মাঝি বলেছিলেন, ‘উপনির্বাচনের সময় একটি মন্দিরে পুজো দেয়ার জন্য গিয়েছিলাম। তারপর ওই মন্দিরটি ধুয়ে শুদ্ধ করা হয়। মন্দিরের বিগ্রহটিকেও ধোয়া হয়।’
সংবাদে প্রকাশ, ‘বিহারের রাজধানী পাটনা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে মধুবনি জেলার একটি মন্দিরে পুজো দিতে যান মুখ্যমন্ত্রী জিতন রাম মাঝি। পুজো শেষে তাঁর কনভয় এলাকা থেকে বেরিয়ে গেলে গোটা মন্দির চত্বর ধুয়ে পরিষ্কার করার নির্দেশ দেয় মন্দির কর্তৃপক্ষ। কারণ, নিম্নবর্গ মহাদলিত সম্প্রদায়ের সদস্য মুখ্যমন্ত্রীর পদার্পণে দেবস্থান অপবিত্র হওয়ায় তা দ্রুত সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়ে। একই কারণে স্নান করিয়ে শুদ্ধ করা হয় মন্দিরের বিগ্রহদের।’
উপনির্বাচনের পর থেকে কথাটা চাপা থাকলেও গত ২৮ সেপ্টেম্বর তা ফাঁস করে দেন মুখ্যমন্ত্রী জিতন রাম মাঝি নিজেই। তিনি বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভোলা পাসোয়ান শাস্ত্রীর জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় একথা বলেন।
মুখ্যমন্ত্রী জাতপাত প্রথার সমালোচনা করে বলেন, ‘বিহারের উপনির্বাচনের সময় আমি মধুবনী গিয়েছিলাম। খুব উৎসাহের সঙ্গে সেখানকার লোকেরা আমাকে একটি মন্দিরে নিয়ে যায়। আমি এটা জানতাম না, পরে জেডিইউ নেতা ও রাজ্যের খনিজ মন্ত্রী রামরমনজী আমাকে বলেছেন, আপনি চলে যাওয়ার পর মূর্তিকে ধুয়ে ফেলা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, "চিন্তা করে দেখুন আমরা কোথায় আছি! যখন মানুষ কোনো কাজের জন্য আমাদের কাছে আসে তারা পা ছুঁয়ে প্রণাম করে। তপশিলি জাতির মানুষরা পা ছুঁয়ে প্রণাম করে না। কিন্তু যারা কাজ নেয়ার জন্য আসে তারা প্রথমেই ষষ্টাঙ্গ হয়ে যায়। যদিও তাদের মনের মধ্যে রয়েছে কত মিথ্যা, তা ওই ঘটনা থেকে বুঝতে পেরেছি।"
গত ২৯ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে ‘নবভারত টাইমস’ নামে সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, “বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জিতন রাম মাঝি বলেছেন, দলিতদের নিয়ে মানুষের চিন্তা ভাবনা আজও বদলায় নি। দলিতদের আজও ‘অচ্ছুত’ মনে করা হয়ে থাকে। আমি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও মানুষ আমাকে অচ্ছুত বলে মনে করে।’ তিনি বলেন, উচ্চবর্ণের মানুষরা কাজ হাসিলের জন্য সবার আগে এসে আমাদের পায়ে পড়ে। কিন্তু তাদের মনের মধ্যে রয়েছে কদাকার।”
তবে জাতপাতের এমন বিচারে দৃশ্যত অপমানিত বোধ করেননি মুখ্যমন্ত্রী জিতন রাম মাঝি। তিনি এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগও করেননি মন্দির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
ফের বিতর্কিত মন্তব্য করায় আলোচনায় উঠে এসেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঝি।#